
ফেনীতে ক্রেতাশূন্য শীতের পোশাকের দোকান, অনলাইনে বিক্রির ধুম
পৌষের শুরুতে ঠান্ডার প্রভাব না থাকলেও ফেনীর উপজেলাগুলোতে গ্রামীণ জনপদে দ্বিতীয় সপ্তাহের বৃষ্টিতে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। কিন্তু ঠান্ডার প্রভাব বাড়লেও উপজেলা শহরগুলোতে বিপণি বিতানগুলো ক্রেতা শূন্য।ক্রেতাদের ব্যান্ড ও অনলাইন মুখীতায় গরম কাপড়ের বিকিকিনিতে ভাটা পড়েছে বলে দাবি করছেন ফেনীর উপ-শহরের ব্যবসায়ীরা। আর ক্রেতারা বলছেন, গ্রামীণ বাজার ও উপজেলার বাজারে নতুন ডিজাইনের পোশাক না থাকায় কেনাকাটায় আগ্রহী নয়।সরেজমিনে ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজী, দাগনভূঞা, সোনাগাজী উপজেলার ব্যবসায়িদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ঠান্ডা তীব্রতা কম থাকায় সাধারণ মানুষ শীতে প্রস্তুতি হিসেবে গরম কাপড় কিনতে কম আগ্রহী ছিল। অন্যদিকে গত সপ্তাহ থেকে শীত বাড়লেও বেশিরভাগ ক্রেতার ব্যন্ড এবং অনলাইন মুখিতায় এই মৌসুমে ক্রেতা শূন্য দোকানীরা।শীতে অন্যান্য পোশাকের মতো বাড়তি চাহিদা থাকে কম্বল ও শালের, কিন্তু এবার ভাটা পড়েছে কম্বল ও শালে। সোনাগাজী উপজেলা বাজারে কাপড়ের জন্য পাইকারি ও খুচরা বিক্রয়ের বড় দোকান সৌদিয়া ক্লথ স্টোর। এই দোকানের কম্বল ও শাল বিক্রয়ের ভাটার কথা জানিয়েছেন ম্যানেজার শিপন।তিনি জানান, শীত মৌসুমে শুরু থেকে কম্বল ও শাল বিক্রিতে চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। পরে আর বিক্রির পরিসংখ্যান থাকে না। গত তিন দিনে এক’শ পাঁচটি কম্বল এবং ৮০টি শাল বিক্রি করা হয়েছে। অথচ গত বছর এই সময়ে প্রতিদিন গড়ে দু’শ থেকে তিন’শ করে কম্বল ও শাল বিক্রি হতো। তুলনামূলক বিক্রি কম হচ্ছে।মানিক মিয়া প্লাজার ইসলামিয়া বেবি শপের দোকানী মোঃ জাহেদ জানান, প্রতিবছর এই ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই শীতের পোশাকের চাহিদা থাকে বেশ। কিন্তু এবার জানুয়ারি মাস চলে আসলেও বাজারে ক্রেতা শূন্য। সাধারণ ক্রেতারা শীতের প্রস্তুতি হিসেবে নভেম্বর থেকে গরম কাপড় কেনা শুরু করে। এই চাহিদার কথা মাথায় রেখে পর্যাপ্ত মালামাল রাখা হলেও ক্রেতা আসছে না।আবরণ ফ্যাশনের সত্ত্বাধিকারী আব্দুর রহমান রানা জানান, শপিংমলের দোকানীদের এই মৌসুমের শীতে পোষাক বিক্রিতে ধস্ নেমেছে। অনলাইনে নিত্য নতুন ও বাহারি পোষাকের কারণে ক্রেতাদের জোঁক ওই দিকে বেশি। অনেক ক্রেতা দোকানে আসলেও অনলাইনের ছবি দেখিয়ে পোষাক খুঁজতে থাকে। এখন সন্ধ্যা নেমে এলেও আজ সারাদিনে মাত্র দু’টো পোষাক বিক্রি করা হয়ে হয়েছে। গত বছরও এই সময়ে দিনে ১৫ থেকে ২০টি পোষাক বিক্রি হতো।শীতের পোশাক কিনতে আসা ফরিদ উদ্দিন নামের এক ক্রেতা বলেন, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে শীত কম থাকায় এতদিন পোশাক কিনিনি। এখন শীতের তীব্রতা বেড়েছে তাই পোশাক কিনতে এসেছি। এবারের বাজারে তেমন নতুন ডিজাইনের শীতের পোশাক দেখছি না। গত বছরের পোশাকই ঘুরে ফিরে দেখছি। এখানে না হলে প্রয়োজনে ফেনী শহরে যাবো।এদিকে ফেনীর ৫ উপজেলায় প্রতিদিন ২৫ লক্ষ টাকার অনলাইন পণ্য গ্রাহকদের সরবরাহের কথা জানিয়েছেন মালামাল পরিবহন করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এজেন্টরা। এদের মধ্যে পাঠাও, রেডেক্স, পেপার ফ্লাই, দারাজ, সুন্দরবন কুরিয়া সার্ভিস , স্টেট ফার্স্ট ও ই-কুরিয়ারসহ অসংখ্য পণ্য পরিবহনের প্রতিষ্ঠান তাদের এজেন্টের মাধ্যমে উপজেলাগুলোতে অনলাইনে অর্ডার করা পণ্য গ্রাহক পযার্য়ে পৌঁছে দেয়।জমা-কাপড়, কসমেটিকস, ওষুধ, মধু, ইলেকট্রনিক্স পন্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রতিদিন গড়ে ২৫ লক্ষ টাকার পন্য সরবরাহ করা হয় বলে জানিয়েছে পাঠাও মাঠ পর্যায়ের এজেন্ট শহীদ বাঙালি।তাঁর মতো একই কথা জানিয়েছেন রেডেক্স পরিবহন কোম্পানির এজেন্ট মোঃ রানা, স্টেট ফার্স্টের এজেন্ট গোবিন্দ। তাদের ভাষ্য মতে, অনলাইনের অর্ডার করা কাপড় ও কসমেটিকস পণ্য বেশি সরবরাহ করা হলেও এরমধ্যে শীত মৌসুমে গরম কাপের সরবরাহ রয়েছে ৩০ শতাংশ।পাঠাও মাঠ পর্যায়ের এজেন্ট শহীদ বাঙালি জানান, সোনাগাজী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার পণ্য সরবরাহ করেন। তাঁর মতো এমন আরও ১০ জনের অধিক এজেন্ট গ্রাহকদের অনলাইনে অর্ডারকৃত পণ্য পৌঁছে দেন। প্রত্যেক উপজেলার একই চিত্র।
You must log in to post a comment.