
শরীয়তপুরে ভুয়া শ্রমিক দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
শরীয়তপুরে অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি’র আওতায় প্রথম পর্যায়ে ৪০ দিনের কাজ করার সুযোগ পান গ্রামের দরিদ্র মানুষেরা। মাটি কেটে রাস্তা সংস্কারসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকে দরিদ্ররা। শরীয়তপুর সদর উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের ৪৮০ জন দরিদ্র মানুষ কাজ করার কথা থাকলেও তা ভুয়া শ্রমিক তালিকা দিয়ে অর্থ আত্মসার্থের অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, জেলার সদর উপজেলায় ১১ টি ইউনিয়ন শ্রমিক সংখ্যা ৪৮০ জন। এর মধ্যে শৌলপাড়ায় ইউনিয়নে ৪১ জন, চিকন্দি ইউনিয়নে ৪৯ জন, ডোমসারে ইউনিয়নে ৫৪ জন, পালং ইউনিয়নে ২৩ জন, তুলাশার ইউনিয়নে ২৭ জন, রুদ্রকর ইউনিয়নে ৭২ জন, আংগারিয়া ইউনিয়নে ৬৮ জন, চিতলিয়া ইউনিয়নে ৪১ জন, বিনোদপুর ইউনিয়নে ৪৭ জন, চন্দ্রপুর ইউনিয়নে ৪৪ জন, মাহমুদপুর ইউনিয়নে ২৩ জন কাজ করার কথা। কাজের অনিয়মের অভিযোগে আংগারিয়া ইউনিয়নে ৬৮ জন শ্রমিকের কাজ বন্ধ রেখেছে প্রশাসন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রুদ্রকর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডে নিশি চক্রবতীর বাড়ির ব্রিজ হতে রব বেপারী বাড়ির অভিমুখী রাস্তা নির্মান ও পরর্ণনির্মান প্রকল্পে কাজ করছে ১৩ জন শ্রমিক। সেখানে ২৯ জন কাজ করার কথা থাকলেও নেই আর কোন শ্রমিক। তালিকায় নারীদের নাম থাকলেও প্রকল্পে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। নেই প্রকল্পে কোন নারী আবার যে শ্রমিকরা কাজ করছেন তালিকায় তাদের নাম নেই। আবার অনেক ই জানেন না তাদের শ্রমিকের তালিকায় নাম রয়েছে। এছাড়া যারা কাজ করছে তার মোবাইল নাম্বারের সাথে নেই কোন মিল। শৌলপাড়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ওহাব সরদারের বাড়ি থেকে মল্লিক বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মানের ১৩ শ্রমিক থাকার কথা থাকলেও ৫ জন কাজ করছে। একই ইউনিয়নের দক্ষিণ গয়ঘর এলাকার মজিদ আকনের বাড়ি হতে রুহুল আমিন দেওয়ানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মানে কাজে ১৪ জন শ্রমিক থাকার কথা থাকলেও ৫ জন শ্রমিকরা কাজ করছে।এছাড়া রুদ্রকর ইউনিয়নে হতদরিদ্র প্রকল্প ৭২ জন সুভিধাভোগী শ্রমিকের নাম ও বিকাশ নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে যার মধ্যে বেশিরভাগ শ্রমিকদের নাম ঠিকানায় মিল থাকলেও তারা এই প্রকল্পে কোন কাজ করছেন না। অনেকে আবার জানেন না তাদের নাম শ্রমিক হিসেবে দেখানো হয়েছে। তবে সুভিধাভোগীদের যে সকল বিকাশ নাম্বারগুলোতে নিয়মিত হাজিরা ৪০০টাকা করে সরকারি ভাবে দেওয়া হচ্ছে তা তালিকায় অন্তভুক্ত শ্রমিকরা পায় না বলে অভিযোগ করেছেন। তালিকার শ্রমিক শাহানাজ বেগম, লুৎফর শেখের স্ত্রী জাহানারা, শাহেরজান বেগম, আয়নাল কবিরাজ, হালিমা আক্তার সহ অনেকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচির প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য সাইদ শেখ বলেন, আমি সকালে এক গ্রুপ ও দুপুরের পর আরেক গ্রুপ কাজ করে। নারীরা মাঝে মধ্যে এসে কাজ করে যায়। টাকা কিভাবে যায় জানতে চাই বলে বিকাশে যায়। এই বিষয় নিয়ে আপনারা কিছু করলে আমার প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে বলে টাকা দিয়ে সাংবাদিক ম্যানেজ করার চেষ্টা করে।উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নজরুল ইসলামকে অফিসে গিয়ে পাওয়া যায় নি। তাকে ফোন দিলে তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জ্যৈাতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি’র প্রকল্পের অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। অনিয়মের অভিযোগে আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যদি তালিকার সাথে শ্রমিকদের নামের মিল না থাকে তাহলে সেই প্রকল্প তদন্ত সাপেক্ষে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
You must log in to post a comment.