ঢাকামুখী বেকারদের মিছিল
অর্থনীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থানের প্রধানতম কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা হওয়ায় স্বাভাবিক সময়েই রাজধানীমুখী মানুষের ঢল লক্ষ্য করা যায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজার মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করে। করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনার সময় ঢাকায় কর্মরত অসংখ্য মানুষ বেকার হয়ে গ্রামমুখী হয়েছিল। সংসার খরচ চালাতে না পেরে অনেকে গ্রামে পরিবার পাঠিয়ে দিয়েছিল। বেকার হয়ে পড়াদের অনেকে মনে করেছিল, গ্রামে গিয়ে কৃষিকাজসহ অন্তত কিছু একটা করা যাবে। তাদের সে আশা পূরণ হয়নি। সেখানে কর্মসংস্থান হয়নি। এর মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মূল্যস্ফীতি, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার মধ্যে পড়ে তাদের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে। কোনোভাবেই বেকারত্ব গোচাতে পারছে না। বাধ্য হয়ে তারা আবার ঢাকামুখী হয়েছে। এমনিতেই দেশে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনার কারণে দারিদ্র্যের হার ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক দরিদ্র হয়ে গেছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, আগামী বছর পুরোবিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার মধ্যে পড়তে পারে। অনেক দেশ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বে। খাদ্য সংকট তীব্র হয়ে উঠবে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশও এ শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। এর আলামত ইতোমধ্যে পরিদৃষ্ট হয়ে উঠেছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাড়ে তিন কোটি মানুষ এখন মধ্যম ও গুরুতর মাত্রার খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, যা মোট জনসংখ্যার ২১ শতাংশ। নতুন এই পরিসংখ্যান অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। এতে গ্রামে থাকা কর্মপোযোগী বেকার মানুষ বাধ্য হয়ে কাজের সন্ধানে ঢাকামুখী হবে এবং তার মিছিল এখনই দেখা যাচ্ছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদীভাঙনে বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া মানুষও ঢাকামুখী হচ্ছে। এদের প্রত্যেকেই মনে করে, ঢাকা গেলে কিছু একটা করা যাবে। জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে তারা ঢাকামুখী হচ্ছে। তাদের এই মরিয়া হওয়ার প্রবণতা এক ভয়াবহ পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রম এখন এ চাপ সামলাতে পারছে না। কমদামে খাদ্য বিক্রি ও ভিজিএফ কর্মসূচিও দরিদ্র হওয়া মানুষের জন্য যথেষ্ট হচ্ছে না। তারা ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষের জীবনযাপন ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে।
বেকারত্বের হার ঊর্ধ্বগামী হবে। এখনই যদি কর্মসংস্থানের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে তা ঠেকানোর ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে শোচনীয় পরিস্থিতির রাস টেনে ধরা যাবে। এক্ষেত্রে সরকার- বেসরকারি সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বিভিন্ন কর্পোরেট ও শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ ব্যবসায়ীদের যেসব সংগঠন রয়েছে, তারা গ্রাম পর্যায়ে বিনিয়োগের মাধ্যমে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। মন্ত্রী-এমপিসহ সকল জনপ্রতিনিধিকেও উদ্যোগ নিতে হবে। নিজ নিজ এলাকায় বিভিন্ন কর্মসংস্থানমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে বেকারদের কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা ঠেকাতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তাদের বসে থাকলে হবে না। দ্রুত পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিতে হবে। রাজধানীমুখী বেকার মানুষের মিছিল ঠেকাতে গ্রামে কাজের সুযোগ সৃষ্টির বিকল্প নেই।
You must log in to post a comment.