
গ্রেফতার আতঙ্কে খুলনা বিএনপির নেতাকর্মীরা
খুলনা জেলা ও মহানগর বিএনপির গণসমাবেশের পর গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। সমাবেশের পরদিন রেলস্টেশন ও আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এ মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে ৫৯ জনকে। আর অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা সাড়ে চারশ। এদিকে শহর এবং উপজেলা পর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নেতাকর্মীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে আগতদের বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে খুলনা রেলস্টেশনে মুখোমুখি অবস্থান নেয় পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় বিএনপিকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। সেগুলো স্টেশনের দরজা ও জানালার গ্লাসে লেগে ভেঙে যায়। এ ঘটনায় রাত সোয়া ১০টার দিকে স্টেশন মাস্টার মনিক চন্দ্র সরকার বাদী হয়ে রেলওয়ে থানায় মামলা করেন।
রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মোল্লা মো. খবির আহমেদ বলেন, রেলস্টেশনের গ্লাস ভাঙচুরের ঘটনায় রাতে বিএনপির অজ্ঞাতনামা ১৭০ নেতাকর্মীর নামে স্টেশন মাস্টার মামলা করেন। যেহেতু রেলস্টেশন একটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সবার। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
অপরদিকে দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় মামলা করেছেন থানা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক কাজী মোবাক্ষের। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, বিএনপির সমাবেশের দিন দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা অভিযোগ করেছেন। সেটি মামলা হিসাবে রেকর্ড করা হয়েছে। মামলায় ৫৯ জনের নামোল্লেখসহ ২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। আসামিদের অধিকাংশই দৌলতপুর ও খালিশপুর থানা বিএনপির নেতাকর্মী। মামলা দুটি হওয়ার পর গ্রেফতার এড়াতে ঘর ছেড়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। খুলনা মহানগর বিএনপির নেতারাও গ্রেফতারের আশঙ্কা করছেন। নগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা বলেন, শাসক দল সমাবেশ ঠেকাতে শুধু বাধা দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি। এখন মামলা দিয়েও হয়রানি করছে। নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। সমাবেশে যোগ দেওয়ার কারণে তাদের বাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও হামলা চালাচ্ছে।
নগরীর ৩১নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা আমীন আহমেদের বাড়িতে শনিবার রাতে একদল লোক গিয়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না খোলার জন্য হুমকি দিয়ে আসে। তিনি বলেন, ‘সমাবেশ থেকে ফিরে শনিবার রাতে দোকান খুলতে যাই। সেখানে এলাকার আওয়ামী লীগ পরিচয় দিয়ে ১৪-১৫ জনের একটি গ্রুপ গিয়ে দোকান জোরপূর্বক বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে আমি দোকান খুলিনি।’
ডুমুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোল্লা মোশারফ হোসেন মফিজ জানান, শনিবার রাতে আমার বাড়িসহ এলাকার অন্তত ২০ জন বিএনপি নেতার বাড়িতে পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা গিয়ে হুমকি দিয়ে এসেছে। এলাকায় থাকতে নিষেধ করেছে। বিএনপির কোনো প্রোগ্রামে অংশ নিলে ভালো হবে না বলে জানিয়েছে।
পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডা. আব্দুল মজিদ ও সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা গভীর রাতে তাদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করেছে। তারা এ সময় বাড়িতে ছিলেন না। বাড়ির মহিলাদের শাসিয়ে এসেছে যেন তারা আর বাড়িতে না ফেরে। দিঘলিয়া সভাপতি সাইফুর রহমান মিন্টুর বাড়িতে হামলার অভিযোগ করে এনামুল হক বলেন, আমার বাড়িতে রাতে ইটপাটকেল ছুড়ে মেরেছে দুর্বৃত্তরা। অন্যদিকে ২০-২৫ জনের একটি দল গিয়ে মহড়া দিয়েছে রাত ১০টার দিকে। আমি এখনও বাড়ি ফিরতে পারিনি।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান জানান, প্রত্যেক উপজেলায় নেতাকর্মীরা হামলার আশঙ্কা করছেন। কোনো কোনো জায়গায় পুলিশও গিয়ে মামলার ভয় দেখাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে কেউ বাড়িতে থাকতে পারছেন না।
You must log in to post a comment.