
দুর্ভিক্ষ কী আসতে চলেছে ?
খাদ্য সংকট দেখা দিলেই দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি হবার শঙ্কা তৈরী হয়। বাংলাদেশে একবার দুর্ভিক্ষ হয়েছিলো যা ১৯৭৪ সালের মার্চে শুরু হয়ে সেই বছরেরই ডিসেম্বরের দিকে শেষ হয়। ঐ দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। সরকারী হিসাবে, ২৭ হাজার মানুষ অনাহারে মৃত্যুবরণ করেছিল। বেসরকারি হিসেবে অনুমানিক ১ লাখ থেকে সাড়ে ৪ লাখ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মৃত্যুবরণ করে। সেই সময় এই দুর্ভিক্ষকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হিসেবে গণ্য করা হয়। আবার ঐ দুর্ভিক্ষ মানবসৃষ্ট বলেও অভিযোগ রয়েছে। সেই সময় বাংলাদেশকে খাদ্য না দিতে মার্কিন প্রশাসনের রাজনীতিও ইতিহাসের অংশ। বাংলাদেশ তখন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু এবং ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের বলয়ে। কিছুটা আজকের মতো। বিশ্বে তখনো চলছিল স্নায়ুযুদ্ধ। তখন নির্দিষ্টভাবে কিউবা ও ভিয়েতনামের সঙ্গে যেকোনো দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক করার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ছিল। তাই নতুন স্নায়ু যুদ্ধের পুরনো স্মৃতি কেবল স্মৃতি নয়, আতঙ্কেরও।
প্রধানমন্ত্রী সত্য আড়াল করেননি। সোজাসাপ্টা তা জানান দিয়েছেন। বৈশ্বিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই তার বিভিন্ন বক্তব্যে দেশে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা বলছেন। দুর্ভিক্ষের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেছেন, কোভিডের অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও রাশিয়াকে ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ আরোপের কারণে বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে, তাই সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশে যাতে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সেজন্য এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রতি ইঞ্চি জমি উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী কি নিজে থেকেই দুর্ভিক্ষের কথা বলছেন নাকি সত্যিই দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে?
বাড়তে থাকা নিত্যপণ্যের উচ্চদাম, বিদ্যুতের নাজুক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতাসহ নানা ঝুঁকিতে রয়েছে দেশ। নিত্যপণ্যের সঙ্গে বাড়ছে অন্যান্য সেবাপণ্যের দাম। এই অবস্থায় প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা ছোট করছে সাধারণ মানুষ। কমিয়ে দিচ্ছে চিকিৎসার মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যয়ও। খরচ কমিয়ে টিকে থাকার এই কৌশলও এখন আর কাজে আসছে না। ব্যয়ের লাগাম টানা যাচ্ছে না কিছুতেই। প্রতিদিনই বাড়ছে কোনো না কোনো খরচ। কম খেয়ে, একবেলা না খেয়ে অথবা ঋণ করে সামলানোর মতোও নয়। দেশের অবস্থা মোটেই ভালো যাচ্ছে না। সমস্যা আরও অনেক দিকে। টেনে আনতে ছিঁড়ে যাওয়ার দশা। সামলাতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা। নানা ব্যাখ্যা থাকলেও এসব তথ্য নিয়ে দ্বিমত-ভিন্নমতের সুযোগ নেই। সেটি করা মানে, সত্যকে অস্বীকার করা, বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাওয়া, গায়ের জোরে পাহাড় ঠেলা।
You must log in to post a comment.