
কিয়েভসহ ইউক্রেনের কয়েকটি শহরে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, গতকাল সকালে দেশটির ওপর রাশিয়া থেকে অন্তত ৫০টি ক্রুজ মিসাইল ছোঁড়া হয়েছে। এর ফলে রাজধানী কিয়েভসহ দেশটির বেশ কয়েকটি শহরে বিদ্যুৎ এবং পানির সঙ্কট তৈরি হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, গতকাল স্থানীয় সময় সকাল সাতটা থেকে রুশ বাহিনী থেমে থেমে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে শুরু করে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে লিখেছে যে, মূলত ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে ৫০টির বেশি ক্রুজ মিসাইল হামলা চালানো হয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, শীতের আগে ইউক্রেনীয় নাগরিকদের মনোবল ভেঙে দেয়ার জন্যই হয়ত এই হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকোকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কিয়েভে বসবাসরত অন্তত সাড়ে তিন লাখ মানুষ এখন সম্পূর্ণ বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছেন। শনিবার বন্দর নগরী সেভাস্টোপোলে ড্রোন হামলা চালিয়ে রাশিয়ার একটি যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করেছে ইউক্রেন, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন অভিযোগের জবাব হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভিটালি ক্লিটসকো ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে জানিয়েছেন, দেশটির জ্বালানি খাত লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। দেশটির জরুরি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ দ্রুত পুনঃস্থাপন করার ‘সর্বোচ্চ’ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কিয়েভের মেয়র। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে দেশটির প্রকৌশলীদের মোতায়েন করা হয়েছে। হামলার আগে দেশব্যাপী বিমান হামলার পূর্ববর্তী সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ইউক্রেনের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেশটির ক্রেমেনচাকে একটি বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে হামলা চালানো হয়েছে। তবে প্রকল্পটি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে সম্পর্কে পরিষ্কার করে তিনি কিছু বলেননি। ইউক্রেনের স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে কিয়েভ, দক্ষিণাঞ্চলীয় ওডেসা, জাপোরিশা এবং চেরকাসি অঞ্চলের একাধিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্পেও গতকাল হামলা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে কত মানুষ হতাহত হয়েছেন কর্তৃপক্ষ সে সম্পর্কে কোন তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে বিদ্যুৎ এবং পানির সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং কোন কোন এলাকায় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ডাউন রয়েছে।
রুশ বাহিনীকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কিরিলো টিমোশেঙ্কো টেলিগ্রামে লিখেছেন, ‘তাদের ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে কয়েকটিকে বিমান বিধ্বংসী প্রতিরক্ষার মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে আঘাত হেনেছে অনেক ক্ষেপণাস্ত্র।’ এদিকে, কিয়েভসহ যেসব শহরে হামলা হয়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে, এবং আরো হামলা হতে পারে এমন সতর্কতা দেয়া হয়েছে। ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইনাট দেশটির টেলিভিশনে বলেছেন, এই হামলা চালানোর জন্য রাশিয়া কৌশলগত বোমারু বিমান ব্যবহার করেছে। তবে রাশিয়া এখন পর্যন্ত এ হামলা নিয়ে কোন মন্তব্য করেনি।
ইউনিটগুলির গোলাবর্ষণ এবং সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপের ফলে, শত্রু তাদের প্রাথমিক অবস্থানে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিল। এছাড়াও, শত্রুর অবস্থানের ১৩টি এলাকায় হামলা করা হয়েছিল,’ তিনি বলেছিলেন, ‘১৮০ জনেরও বেশি ইউক্রেনীয় সৈনিক, ১১টি সাঁজোয়া যুদ্ধ যান এবং ২১টি যানবাহন ধ্বংস হয়ে গেছে।’
কোনাশেনকভ আরও জানান, ‘ক্র্যাসনি লিমানের দিক থেকে, শত্রু লুহানস্ক গণপ্রজাতন্ত্রের স্টেলমাখোভকা, মেকেয়েভকা এবং চেরভোনোপোলোভকার বসতিগুলির দিকে দুটি কৌশলগত গোষ্ঠী দ্বারা আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করেছিল। সমস্ত আক্রমণ প্রতিহত করা হয়েছিল।’ তিনি বলেন, আর্টিলারি এবং বিমান হামলায় ৫০ জনেরও বেশি ইউক্রেনীয় সেনা, একটি ট্যাঙ্ক, দুটি পদাতিক যুদ্ধের যান এবং একটি সাঁজোয়া কর্মী বাহক নিশ্চিহ্ন হয়েছে।
ডোনেৎস্কে ইউক্রেনের দু’টি এমআই-৮ হেলিকপ্টার ও সু-২৫ বিমান ভূপাতিত : রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী একটি বিশেষ অভিযানের সময় ডোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের দুটি ইউক্রেনীয় এমআই-৮ হেলিকপ্টার এবং একটি সু-২৫ বিমান ভূপাতিত করেছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ রোববার এ তথ্য জানিয়েছেন। ‘ডোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের নিকোলসকোয়ে বসতির কাছে বিমান বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একটি ইউক্রেনীয় সু-২৫ যুদ্ধ বিমান ধ্বংস করেছে। ডোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের কিরভস্ক এবং কনস্টান্টিনোভকা বসতি এলাকায় দুটি ইউক্রেনীয় এমআই-৮ হেলিকপ্টার গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে,’ তিনি বলেন।
ইউক্রেনীয় সেনাদের ‘দাঁত ভাঙা’ জবাব দিতে প্রস্তুত খেরসন : খেরসন অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ ইউক্রেনীয় জঙ্গি ও বিদেশী ভাড়াটে সৈন্যদের দমন করার জন্য এলাকার প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করছে, গতকাল খেরসন অঞ্চলের উপ-প্রধান কিরিল স্ট্রেমাসভ তাসকে বলেছেন।
‘আমরা যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং খেরসনকে শক্তিশালী করছি। আমরা এমন একটি সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছি যা শুধু শহর দখল করা কঠিন করে তুলছে না বরং নব্য-নাৎসি এবং ভাড়াটে বাহিনীকে তাদের দাঁতে ঘুষি মারার জন্য যথেষ্ট হবে,’ তিনি জোর দিয়েছিলেন। আঞ্চলিক কর্মকর্তা ৩০ অক্টোবর রিপোর্ট করেছেন যে, খেরসন আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ দুর্গ তৈরি করছে এবং শহরটিকে তার প্রতিরক্ষার জন্য প্রস্তুত করছে। টেরিটোরিয়াল ডিফেন্স ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিটগুলি সর্পিল ব্রুনো কাঁটাতার দিয়ে এলাকা ঘিরে ফেলেছে যাতে সেনা-বিরোধী প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যায় এবং শত্রুদের অগ্রগতিতে বাধা দেয়, তিনি যোগ করেছেন।
You must log in to post a comment.