
আশুলিয়ায় এক রাতেই ১০ বাড়িতে আগুন
একটি থেকে আরেকটি বাড়ির দূরত্ব ২০০ থেকে ৫০০ গজের মধ্যে। কিন্তু দুই ঘণ্টার ব্যবধানে একই গ্রামের এমন ১০টি বাড়িতে আগুন লেগেছে। বাড়িগুলো আলাদা আলাদা দূরত্বে থাকায় একটি থেকে আরেকটিতে আগুন ছড়িয়ে যাওয়ার কারণ নেই। এমন পরিস্থিতিতে গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এই অগ্নিকাণ্ডে কোনো মানুষ হতাহত না হলেও একজনের গোয়ালে চারটি ছাগল দগ্ধ হয়েছে। অনেকের ঘরে আসবাপত্রসহ জমির দলিল পুড়ে গেছে। আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের বাইদগাঁও গ্রামে দিবাগত রাত ২টা থেকে ৪টার দিকে এই আগুন লাগে। এই ঘটনায় পুলিশও হতবাক। হিসাব মিলছে না তাদের অনুসন্ধানেও।
শিমুলিয়ার ইউনিয়নের পাশে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় গত ২৮ জুলাই একই কায়দায় তিন গ্রামের নয়টি বাড়িতে আগুন দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এবার বাইদগাঁও গ্রামের হযরত আলী, শওকত আকবর, আজিজুল হক, মৃত মফিজ উদ্দিন, শাহাবুদ্দিন, দিপু, আক্কাস প্রফেসর, মিয়াজ উদ্দিন এবং চাতৈলভিটি এলাকার আলাল মাস্টার ও নূর মোহাম্মদের বাড়িতে আগুন লাগে।
ভুক্তভোগী হযরত আলী মাস্টার বলেন, তার বাড়ির গোয়াল ঘর থেকে রাত ৩টার দিকে ছাগলের চিৎকার শুনে ছোট মেয়ে জেগে উঠে এবং তারাও জেগে উঠেন। ঘরের বাইরে গিয়ে দেখেন, তার গোয়াল ঘরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। পরে তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আগুন নেভান। আগুনে গোয়াল ঘরে থাকা তাঁর চারটি ছাগল কিছুটা দগ্ধ হয়। পরে ছাগলগুলো জবাই করা হয়। তারা এখন চরম আতঙ্কে রয়েছেন।
শওকত আকবর নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, তার স্ত্রী অসুস্থ থাকায় তিনি রাতে জেগে ছিলেন। আশপাশের লোকজনের চিৎকার শুনে বের হন। বের হয়ে দেখেন তার দুইটা ঘরে আগুন জ্বলছে। পরে দ্রুত মোটর থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি দিয়ে আগুন নেভান। আগুনে তার ঘরে থাকা জমির কাগজপত্র এবং খাটসহ নানা জিনিসপত্র পুড়ে যায়।
শুধু শওকতের ঘরেই নয়, আশপাশের আজিজুল হকের ঘরের বারান্দায়, মৃত মফিজ উদ্দিনের বড় রান্না ঘরে, শাহাবুদ্দিন মাদবরের রান্না ঘরে, দিপুর কলোনীর একটি খালি কক্ষে, আক্কাস প্রফেসরের পরিত্যক্ত একটি ঘরে, মিয়াজ উদ্দিনের ধানের গোলা এবং চাতৈলভিটি এলাকার আলাল মাস্টার ও নূর মোহাম্মদের ধানের গোলায় আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
মৃত মফিজ উদ্দিনের স্ত্রী শেফালী বেগম জানান, তিনি তার একমাত্র ছেলে সজিবকে নিয়েই বাড়িতে থাকেন। অনেক কষ্ট করে টালি টিন (মাটির টিন) দিয়ে বড় করে একটি রান্নাঘর নির্মাণ করেছিলেন। রাত ৩টার দিকে মানুষের চিৎকারে ঘুম ভাঙে তার। ঘরের দরজা খুলতে গেলে বুঝতে পারেন বাইরে থেকে লাগানো। দরজা খুলতে না পেরে জানালা দিয়ে বাইরে তাকান। দেখেন তার রান্নাঘরে দাআগুন জ্বলছে। পরে তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে ঘরের দরজা খুলে দেন ও পানি দিয়ে আগুন নেভানো হয়।
খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলো পরিদর্শনে এসে শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এবিএম আজাহারুল ইসলাম সুরুজ বলেন, নিশ্চয় এটা পরিকল্পিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের শক্তির জানান দিতে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূর মোহাম্মদ বলেন, তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। একেক বাড়ি থেকে আরেকটি বাড়ির দূরত্ব অন্তত ২০০ থেকে ৫০০ গজ। ফলে তদন্ত ছাড়া বিষয়টি নিয়ে এখন কোনো ধারণা দেওয়া সম্ভব নয়।
You must log in to post a comment.