
প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় কক্সবাজারবাসী
আগামী ৭ ডিসেম্বর বুধবার কক্সবাজার আসছেন আওয়ামী লীগ প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারাদেশে ধারাবাহিক সফরের অংশ হলেও এটি প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী জনসভা বলেই নিশ্চিত করেছেন দলীয় নেতা কর্মীরা। এই সফরে দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে সাক্ষাত ছাড়াও শেখ কামাল স্টেডিয়ামে জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর কক্সবাজার সফর ও জনসভা ঘিরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী একটি আন্তর্জাতিক নৌ মহড়ায় অংশ নেয়ার পাশাপাশি জনসভায় ভাষণ দেবেন। এতে পুরো শহরসহ আশেপাশের এলাকাজুড়ে করা হয়েছে সাজসজ্জা, রাতে করা হচ্ছে লাইটিং। উৎসবের আমেজ শহরের প্রতিটি প্রান্তে। কারণ, বহুদিন পর আসছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। জেলা ও উপজেলায় প্রস্তুতিমূলক কর্মযজ্ঞ চলছে।এখন প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় কক্সবাজারবাসী। সমাবেশ সফল করতে গত ১৫ দিন ধরে ব্যস্ত সময় পার করছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। তারা বলছেন, এই জনসভায় স্মরণকালের জনসমাগম ঘটবে।
এদিকে ৭ ডিসেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের ইনানী-পাটোয়ারটেক সৈকতে অনুষ্ঠেয় তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নৌশক্তি প্রদর্শন মহড়ার উদ্বোধন করবেন। বাংলাদেশ নৌবাহিনী আয়োজিত নৌশক্তি মহড়ায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, চীনসহ ৩৬টির বেশি দেশ অংশগ্রহণের কথা রয়েছে।সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ‘ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ ২০২২’ উপলক্ষে পাটোয়ারটেক সৈকত থেকে পশ্চিম দিকে সাগরের জলরাশির ওপর দীর্ঘ একটি সেতু ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে। সেতুর শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক নৌশক্তি মহড়ার সালাম গ্রহণ এবং নৌশক্তি প্রদর্শন সম্মেলনের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। মহড়ায় অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, চীনসহ ৪১টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এখন পর্যন্ত ৩৬টি দেশ অংশগ্রহণের কথা নিশ্চিত করেছে।ওই দিন বেলা আড়াইটায় সৈকতের লাবনী পয়েন্টের কাছে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের দলীয় জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।শহর ও জনসভাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে সংস্কার হচ্ছে রাস্তা-ঘাট। বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, দেওয়াল লেখন, আলোকসজ্জা ও তোরণ নির্মাণসহ সাজসজ্জার কাজ চলছে পুরোদমে। চলছে মাইকিংসহ প্রচার-প্রচারণাও। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে উন্মুখ হয়ে আছেন কক্সবাজারের সর্বস্তরের মানুষ।এদিকে জনসভাকে কেন্দ্র করে জেলাজুড়ে নিশ্ছিদ্র ও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। এর মধ্যে শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন, গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি, জনসভা মঞ্চ ঘিরে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়াও শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের চারপাশে ও ভেতরে টহল দিচ্ছেন গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ ও বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা।কক্সবাজারবাসী বলছেন, শেখ হাসিনার হাত ধরে পরপর গত তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে কক্সবাজার উন্নয়ণে ৭২টি মেগা প্রকল্পসহ প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার উন্নয়ণ কাজ এখনো চলমান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে ওইসব উন্নয়ন কাজের গতি বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শেষের পথে। মহেশখালীতে হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর, তার পাশের মাতারবাড়ীতে সমাপ্তির পথে দেশের বৃহৎ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। আগামী অক্টোবর নাগাদ শেষ হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ ১০ হাজার ৭০০ ফুট দৈর্ঘ্যের কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের নির্মাণকাজ। টেকনাফ সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, সোনাদিয়ায় পরিবেশবান্ধব পর্যটনকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, খুরুশকুলে পাঁচ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর জন্য ফ্ল্যাটবাড়ির বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার ৭২টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ সমাপ্তির পথে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজারের চেহারা পাল্টে যাবে। কক্সবাজারের মানুষ না চাইতেই এত কিছু দিয়েছেন শেখ হাসিনা। কক্সবাজারের মানুষ মুখিয়ে আছেন শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে।দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কক্সবাজার সফর ও জনসভা ঘিরে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। এমনকি বহুদিনের অনৈক্য ও কোন্দল ভুলে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে মাঠে নেমেছেন সর্বস্তরের নেতা-কর্মী।সদর উপজেলা আওয়ালীগের সাধারণ সম্পাদক এড. রেজাউর রহমান রেজা এপ্রসঙ্গে বলেন, জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে আমরা যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছি। গত ১৫ দিন ধরে এই কর্মযজ্ঞ চলছে। জনসভাকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের মানুষের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কক্সবাজারের জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে। জনসভা উপলক্ষে জেলা নতুন সাজে সেজেছে। আমরা এখন প্রধানমন্ত্রীর আসার অপেক্ষায় রয়েছি।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে জনসমুদ্রে রূপ দিতে কক্সবাজারের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কর্মী সমর্থকরা ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে কাজ করছেন।কক্সবাজার ৩ আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের অনেক বছর পর কক্সবাজারের সমাবেশে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ও স্থানীয় ইস্যু সম্পর্কে মুক্তকণ্ঠে কথা বলবেন। তাই এই জনসভা সফল করে তোলার জন্য আওয়ামী লীগের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মীদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।প্রধানমন্ত্রীর এই সফর ঘিরে নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত। জনসভা সফল করতে সবাই মাঠে কাজ করছে। এই জনসভা কক্সবাজারের সর্ববৃহৎ জনসভায় রূপ দিতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে।কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এড. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বিভিন্ন উপজেলার সম্মেলন ও প্রধানমন্ত্রীর সফর সফল করতে ইতোমধ্যে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা হয়েছে। সভায় আগামী ৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার আগমনে জনসভাকে জনসমুদ্রে রূপান্তর করা হবে। এর জন্য ১০টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে।জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, আগামী ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে অনুষ্ঠিতব্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা জনসমুদ্রে রূপান্তর হবে।
দলীয় নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সমাবেশে ওলামায়ে কেরামদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সমাবেশকে আরও বেশি প্রাণবন্ত ও পরিপূর্ণতা এনে দিবে।কউক চেয়ারম্যান কমোডর (অব) মো. নুরুল আবছার বলেন, কক্সবাজারের প্রতি শেখ হাসিনার আন্তরিকতা কতটুকু, তা টের পাওয়া যায় বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন প্রকল্পগুলো খতিয়ে দেখলে। আগামী জুন মাসের মধ্যে কক্সবাজারে আসছে রেল।৭ ডিসেম্বরের দলীয় জনসভা থেকেও প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারের উন্নয়নে নতুন কিছু ঘোষণা দিতে পারেন জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনার এবারের সফর গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা কক্সবাজারকে যা দিয়েছেন, অতীতে কোনো সরকারের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি।
You must log in to post a comment.