
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়মুক্তি পাচ্ছেন
সরকারি কর্মচারীদের দায়মুক্তির সুযোগ রেখে সংশোধিত সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ মন্ত্রিপরিষদ সভায় অনুমোদন পেয়েছে। সোমবার (১২ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
অনুমোদিত আইন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এ আইনের সুবাদে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়মুক্তি পাবেন। সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মচারী অবসরে যাওয়ার পর ‘গুরুতর’ কোনো অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত হলে তার অবসর-সুবিধা ‘আংশিক’ বা ‘সম্পূর্ণ’ বাতিল এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি পাঁচ বছর পর সম্পদের বিবরণী নিজ মন্ত্রণালয়ে জমাদানের বিধান এ আইনে তুলে দেওয়া হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, কয়েক বছর ধরে আইনটি কার্যকর রয়েছে। সমস্যা দেখা দেওয়ায় তা সংশোধন করা হলো। এর আওতায় স্ব-শাসিত সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত ব্যক্তিদের বেতন ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা নির্ধারণের বিষয়টি স্পষ্ট করা হলো। কর্মচারী অবসরে গেলে তিনি যেসব সুবিধা প্রাপ্য হবেন তা নির্ধারিত হওয়ার কথা এ আইনের ১৭ ধারায়। কিন্তু ১৭ ধারায় রয়েছে প্রশিক্ষণ-সংক্রান্ত বিষয়। এবার ১৭ ধারার পরিবর্তে ১৫ ধারা প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে।
গত তিন বছর আগে সরকারি কর্মচারী আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পরপরই বিতর্ক সৃষ্টি হয়। আইনটি নিয়ে সরব হয়ে ওঠে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। আইনের বিভিন্ন ধারা নিয়ে আদালতে রিটও হয়েছে। এর মধ্যে সংশোধিত আইনের ১, ৪৮ ও ৫০ ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। ধারা ৫০-এর উপধারা (১)-এ উল্লিখিত ১৭-এর পরিবর্তে ১৫ প্রতিস্থাপিত হবে। (৪ক) উপধারায় (৪)-এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে এই আইনের ধারা ১৫, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪ ও ৪৫-এর বিধানসমূহ স্ব-শাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্যও প্রযোজ্য রাখা হয়েছে। আইনের ৪৮ ধারা সংশোধন : এখানে ‘৫১’-এর পরিবর্তে ‘৪৯’ প্রতিস্থাপিত হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবটি গত ২৬ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন করা হয়েছিল। এর আলোকে আইনের এ-সংক্রান্ত উপধারাটি বাতিল করার বিধান রেখেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি চাকরি আইনে সরকারি কর্মচারীদের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সংজ্ঞা অনুযায়ী, ‘সরকারি কর্মচারী অর্থ এই আইনের আওতাভুক্ত প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি।’ তার মতে, কোনো সরকারি কর্মচারী অবসরে চলে যাওয়ার পর আর ‘প্রজাতন্ত্রের’ কর্মে নিযুক্ত থাকেন না। তাই তাদের এই আইনের আওতায় রাখার সুযোগ নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০০৩ সালে ‘সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও অধ্যাদেশ জারির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৩ সালে খসড়াটির আমূল পরিবর্তন করা হয়। এরপর সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট নাম বদলে ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী আইন’ রাখা হয়। ২০১৮ সালে এসে আইনটির নাম রাখা হয় সরকারি চাকরি আইন। এটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করা হয়। তিন বছর আগে আইনটি কার্যকরের জন্য সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে আইনটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে গত তিন বছরে সরকারি চাকরি আইনে যেসব সমস্যা দেখা দিয়েছে তা অনুমোদিত আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সরকারের রাজস্ব খাতভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো স্বায়ত্তশাসিত ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিতদের ক্ষেত্রেও আইনটি প্রযোজ্য হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাব সম্পর্কিত তথ্যাদি অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার প্রস্তাব সংযোজন করা হয়েছে সংশোধনীটিতে। আগেও অর্থ মন্ত্রণালয়কে এসব জানানো হতো, তবে এই সংশোধনীর মাধ্যমে এটি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো বলেন, এমনকি এসব প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে আসা দেশি-বিদেশি অনুদান ও এসব অনুদানে গৃহীত প্রকল্পের আয়-ব্যয়ের হিসাবও দিতে হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। সরকারের সব ধরনের আয়-ব্যয় সমন্বয় করার জন্যই এই সংশোধনী। তা ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব বেতন কাঠামোসহ সংশ্লিষ্ট আর্থিক বিষয়গুলোও অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে।
You must log in to post a comment.