
সত্যিই কি ফুরিয়ে আসছে রাশিয়ার গোলাবারুদের মজুত?
চলতি বছরের ২৪ বছর ফেব্রুয়ারি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পরাশক্তি রাশিয়া। এরই মধ্যে সাড়ে নয় মাস পেরিয়ে গেছে এই যুদ্ধের। কিন্তু থামেনি রাশিয়া-ইউক্রেন লড়াই।
যুদ্ধের দীর্ঘ এই সময় ধরে একনাগাড়ে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ায় কমছে রুশ গোলাবারুদের মজুত। আর তাই বাধ্য হয়ে ইউক্রেনে হামলার কাজে কয়েক দশকের পুরোনো গোলাবারুদ ব্যবহার করছে রাশিয়া।
এমনকি অনেক গোলাবারুদ ৪০ বছরেরও বেশি পুরোনো। মূলত পুরোনো এসব গোলাবারুদের ব্যর্থতার হারও অনেক বেশি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে প্রায় ১০ মাস আগ্রাসন চালানোর কারণে রাশিয়া তার গোলাবারুদের মজুত কমিয়ে চলেছে। আর এই কারণে উচ্চ ব্যর্থতার হার থাকা সত্ত্বেও কয়েক দশক পুরোনো গোলাবারুদের দিকে ঝুঁকছে রুশ সামরিক বাহিনী। সোমবার সিনিয়র একজন মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা একথা বলেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন ওই কর্মকর্তা বলেছেন, “তারা (রাশিয়া) পুরোনো দিনের গোলাবারুদ ব্যবহার করছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে, তারা সেই পুরোনো গোলাবারুদ ব্যবহার করতে ইচ্ছুক। এসব গোলাবারুদের মধ্যে কিছু মূলত ৪০ বছরেরও বেশি আগে উৎপাদিত হয়েছিল।”
মূলত যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক সময়ে অভিযোগ করে আসছে যে, রাশিয়ার তার নিজেদের গোলাবারুদের নিয়মিত সরবরাহ শেষ করে ফেলায় এই ধরনের সামরিক সরঞ্জামের জন্য দেশটি ইরান ও উত্তর কোরিয়ার দিকে ঝুঁকছে।
ঊর্ধ্বতন মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা একটি মূল্যায়ন সামনে এনে বলেছেন, রাশিয়া যদি বিদেশি সরবরাহকারী এবং পুরোনো মজুতের আশ্রয় না নেয় তবে ২০২৩ সালের প্রথম দিকে গোলাবারুদের ব্যবহারযোগ্য মজুত সম্পূর্ণরূপে শেষ করে ফেলবে দেশটি।
মার্কিন ওই সামরিক কর্মকর্তা বলছেন, “আমাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, রাশিয়া যে হারে তার কামান এবং রকেট গোলাবারুদ ব্যবহার করছে তাতে তারা সম্ভবত ২০২৩ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত এটি চালিয়ে যেতে পারবে।”
তার দাবি, গোলাবারুদের পুরোনো মজুত ব্যবহারের ঝুঁকি রয়েছে।
এছাড়া ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য ইরান রাশিয়ার কাছে ড্রোন সরবরাহ করেছে বলে মার্কিন ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলেছেন। মূলত মস্কো ইরানের কাছ থেকে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পাওয়ার চেষ্টা করছে এবং বিনিময়ে তেহরানকে অভূতপূর্ব সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে বলে জাতিসংঘে নিযুক্ত ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত গত শুক্রবার বলেছেন।
বারবারা উডওয়ার্ড আরও বলেন, “ব্রিটেন ‘প্রায় নিশ্চিত যে, রাশিয়া উত্তর কোরিয়া (এবং) অন্যান্য নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশগুলোর কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করতে চাইছে, কারণ তাদের নিজস্ব মজুত স্পষ্টভাবে কমে যাচ্ছে।”
ইরান অবশ্য গত মাসে মস্কোকে ড্রোন সরবরাহের কথা স্বীকার করে। কিন্তু তেহরানের দাবি, এসব ড্রোন ইউক্রেনে যুদ্ধের আগে পাঠানো হয়েছিল।
এছাড়া রুশ বাহিনী ইউক্রেনে হামলার জন্য ইরানের ড্রোন ব্যবহার করছে এমন অভিযোগও অস্বীকার করেছে রাশিয়া। একইসঙ্গে উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র সরবরাহের অভিযোগও অস্বীকার করে থাকে মস্কো।
তবে রাশিয়া গোলাবারুদের ফুরিয়ে আসার যে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে, সে বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি। তাছাড়া রাশিয়ার পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনও ধরনের মন্তব্য করা হয়নি।
সুতরাং সময়ই বলে দেবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সত্যিই রাশিয়ার গোলাবারুদের মজুত ফুরিয়ে আসছে কি না।
You must log in to post a comment.